পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্ক করা নিয়ে অনেকের মনেই বিভিন্ন প্রশ্ন থাকে। এটি একটি স্বাভাবিক জিজ্ঞাসা এবং এর উত্তর জানা থাকা প্রয়োজন। এই আর্টিকেলে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব, যেখানে আপনি পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্ক করা যায় কিনা, এর সুবিধা-অসুবিধা এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানতে পারবেন।
পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্ক করা যায় কিনা?
হ্যাঁ, পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্ক করা যেতে পারে। এতে কোনো স্বাস্থ্যগত বাধা নেই। পিরিয়ড বা মাসিক চক্র নারীদের জীবনে একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময় অন্তর নারীদের যোনিপথে রক্তক্ষরণ হয়। এই সময়টিতে শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কিছু দ্বিধা এবং প্রশ্ন থাকা স্বাভাবিক। তবে, কিছু বিষয় বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তিগত পছন্দ, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরি।
পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্কের সুবিধা
পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্কের কিছু সম্ভাব্য সুবিধা রয়েছে:
- ব্যথানাশক: পিরিয়ডের সময় অনেক নারী তলপেটে ব্যথায় ভোগেন। শারীরিক সম্পর্কের সময় শরীর থেকে এন্ডোরফিন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করতে পারে। এটি মাসিকের ব্যথায় আরাম দিতে সহায়ক হতে পারে।
- মানসিক চাপ হ্রাস: শারীরিক সম্পর্ক মানসিক চাপ কমাতে এবং মনকে প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। পিরিয়ডের সময় অনেক নারী মানসিক অস্থিরতায় ভোগেন, তাই এই সময় শারীরিক সম্পর্ক তাদের মানসিক শান্তির কারণ হতে পারে।
- কাছাকাছি আসা: শারীরিক সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার সম্পর্ককে আরও গভীর করে তোলে। পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্ক তাদের আরও কাছাকাছি আনতে পারে।
- মাসিকের দ্রুত সমাপ্তি: কিছু নারীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে যে পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্ক করলে মাসিকের রক্ত দ্রুত শেষ হয়ে যায়। যদিও এর বৈজ্ঞানিক প্রমাণ এখনো জোরালো নয়, তবে অনেকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এমনটাই বলে।
পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্কের অসুবিধা এবং ঝুঁকি
পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্কের কিছু অসুবিধা এবং ঝুঁকিও রয়েছে যা বিবেচনা করা উচিত:
- পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব: পিরিয়ডের সময় রক্তক্ষরণের কারণে অনেকের কাছে এটি অস্বস্তিকর মনে হতে পারে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব বোধ হতে পারে।
- সংক্রমণের ঝুঁকি: যদিও গবেষণা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে না, তবে কারো কারো মতে পিরিয়ডের সময় জরায়ু সামান্য খোলা থাকে, তাই সংক্রমণের ঝুঁকি কিছুটা বাড়তে পারে। তবে, এটি খুব বেশি উদ্বেগের কারণ নয় যদি উভয় সঙ্গী স্বাস্থ্যকর থাকেন।
- গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা: পিরিয়ডের সময় গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ডিম্বস্ফোটনের সময় এগিয়ে এলে বা অনিয়মিত মাসিক চক্র থাকলে গর্ভবতী হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই, সুরক্ষা ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ।
- মানসিক অস্বস্তি: কিছু নারীর জন্য পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্ক মানসিকভাবে অস্বস্তিকর হতে পারে। সঙ্গীরও এই বিষয়ে সংবেদনশীল হওয়া উচিত।
পিরিয়ডের সময় গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা
পিরিয়ডের সময় গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা সাধারণত কম থাকে, কারণ ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু বের হওয়ার সময় (ওভুলেশন) মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে ঘটে। তবে, শুক্রাণু শরীরে পাঁচ দিন পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। যদি আপনার মাসিক চক্র ছোট হয় এবং ডিম্বস্ফোটন খুব তাড়াতাড়ি হয়, তবে পিরিয়ডের শেষের দিকে শারীরিক সম্পর্ক করলে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এড়াতে সুরক্ষা ব্যবহার করা উচিত।
পিরিয়ডের সময় সুরক্ষা ব্যবহার করা উচিত?
হ্যাঁ, পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্ক করলে সুরক্ষা ব্যবহার করা উচিত। এর প্রধান কারণগুলো হলো:
- গর্ভধারণ এড়ানো: যদিও সম্ভাবনা কম, তবুও গর্ভধারণের ঝুঁকি থাকে।
- সংক্রমণ প্রতিরোধ: সুরক্ষা ব্যবহারের মাধ্যমে যৌনবাহিত রোগ (STD) থেকে নিজেদের রক্ষা করা যায়। পিরিয়ডের সময় বা অন্য যেকোনো সময় শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
কনডম এক্ষেত্রে একটি সহজ এবং কার্যকর সুরক্ষা পদ্ধতি।
পিরিয়ডের সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্ক করলে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি। উভয় সঙ্গীরই ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা উচিত। শারীরিক সম্পর্কের আগে এবং পরে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও, বিছানার চাদর এবং অন্যান্য জিনিসপত্র পরিষ্কার রাখা উচিত।
পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে ভুল ধারণা
পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্ক নিয়ে সমাজে অনেক ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। যেমন, এটি অস্বাস্থ্যকর বা এতে সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি। তবে, সঠিক জ্ঞান এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে এই ধরনের ঝুঁকি কমানো যায়।
চিকিৎসকের পরামর্শ কখন প্রয়োজন?
যদি পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্ক করার পরে কোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা যায়, যেমন – অতিরিক্ত রক্তপাত, তীব্র ব্যথা, দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব বা জ্বর, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায়, পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্ক করা ব্যক্তিগত পছন্দের বিষয়। স্বাস্থ্যগত দিক থেকে তেমন কোনো বড় বাধা না থাকলেও, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরি। সুরক্ষা ব্যবহার করা এবং সঙ্গীর মানসিক ও শারীরিক অবস্থাকে সম্মান জানানো উচিত।
আরও পড়ুন:
পিরিয়ডের সময় সেক্স করলে কি হয়? আসল সত্যতা জানুন!
পিরিয়ড ১০ দিনের বেশি হলে করণীয়
referance: Sex During Periods: Benefits, Side Effects, Pregnancy Risk
FAQS
হ্যাঁ, পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্ক করা সাধারণত নিরাপদ। তবে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা এবং সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে সুরক্ষা ব্যবহার করা উচিত। যদি কোনো অস্বাভাবিক ব্যথা বা অস্বস্তি হয়, তবে তা উপেক্ষা করা উচিত নয়।
পিরিয়ডের সময় গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা কম, তবে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ডিম্বস্ফোটনের সময় এগিয়ে এলে বা অনিয়মিত মাসিক চক্র থাকলে গর্ভবতী হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ এড়াতে সুরক্ষা ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের কাজ।
পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্কের কিছু সুবিধা হলো – এটি ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করতে পারে, মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার সম্পর্ককে আরও গভীর করে এবং কারো কারো ক্ষেত্রে মাসিকের রক্ত দ্রুত শেষ হতে পারে।
মাসিকের সময় সেক্স করার কিছু অসুবিধা হলো – রক্তক্ষরণের কারণে অস্বস্তি লাগতে পারে, সংক্রমণের সামান্য ঝুঁকি থাকে এবং কিছু নারীর জন্য এটি মানসিকভাবে অস্বস্তিকর হতে পারে।
, পিরিয়ডের সময় কনডম ব্যবহার করা উচিত। এটি গর্ভধারণের ঝুঁকি কমায় এবং যৌনবাহিত রোগ (STD) থেকে সুরক্ষা দেয়।
মাসিকের রক্ত স্বাভাবিকভাবেই শরীরের অন্যান্য তরলের মতো। তবে, যদি কোনো সংক্রমণ থাকে, তবে জীবাণু থাকতে পারে। তাই, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা জরুরি।
গবেষণা স্পষ্টভাবে প্রমাণ না করলেও, কারো কারো মতে পিরিয়ডের সময় জরায়ু সামান্য খোলা থাকে বলে সংক্রমণের ঝুঁকি কিছুটা বাড়তে পারে। তবে, উভয় সঙ্গী সুস্থ থাকলে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখলে এই ঝুঁকি কম থাকে।
হ্যাঁ, শারীরিক সম্পর্কের সময় শরীর থেকে এন্ডোরফিন নিঃসৃত হয়, যা প্রাকৃতিক ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে এবং মাসিকের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
মাসিকের সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে কিছু নারীর ক্ষেত্রে যৌন আকাঙ্ক্ষা বাড়তে পারে, আবার কারো কারো ক্ষেত্রে কমও থাকতে পারে। শারীরিক অস্বস্তির কারণে অনুভূতিতে পরিবর্তন আসা স্বাভাবিক।