পিরিয়ড না হলে কি খাওয়া উচিত? ১০টি পিরিয়ড নিয়মিত করার খাবার

সোশাল মিডিয়ায় শোয়ার করুন!

Rate this post

পিরিয়ড না হলে কি খাওয়া উচিত? এই প্রশ্নটি অনেক নারীর মনেই ঘুরপাক খায়। পিরিয়ড বিলম্বিত হওয়া বা অনিয়মিত হওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যেমন—স্ট্রেস, হরমোনাল ইমব্যালান্স, পুষ্টির ঘাটতি বা স্বাস্থ্য সমস্যা। তবে কিছু প্রাকৃতিক খাবার রয়েছে যা পিরিয়ড নিয়মিত করতে সাহায্য করে। এই আর্টিকেলে আমরা জেনে নেব পিরিয়ড না হলে কোন খাবারগুলো খাওয়া উচিত এবং কীভাবে এগুলো আপনার মাসিক চক্রকে স্বাভাবিক করতে সাহায্য করবে।

পিরিয়ড না হলে কি খাওয়া উচিত? ১০টি কার্যকরী প্রাকৃতিক খাবার

১. আদা – মাসিক চক্র সচলকারী

নিয়মিত পিরিয়ড না হলে কি খাওয়া দরকার এই প্রশ্নের প্রথম সমাধান হলো আদা। আদার উষ্ণ প্রকৃতি জরায়ুর রক্ত প্রবাহ বাড়ায় এবং হরমোনাল ভারসাম্য রক্ষা করে।

ব্যবহার পদ্ধতি:

  • ১ ইঞ্চি আদা কুচি + ১ কাপ পানি ১০ মিনিট ফুটিয়ে নিন
  • দিনে ২-৩ বার পান করুন
  • পিরিয়ড আসা পর্যন্ত চালিয়ে যান

২. হলুদ দুধ – হরমোনাল সমতা বিধায়ক

পিরিয়ড না হলে কি খাওয়া উচিত জানতে চাইলে হলুদ দুধ একটি আদর্শ পছন্দ। কারকিউমিন হরমোন নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

প্রস্তুত প্রণালী:

  • ১ গ্লাস গরম দুধ + ১/২ চা চামচ হলুদ গুঁড়া
  • সামান্য গোলমরিচ ও মধু মিশিয়ে নিন
  • রাতে শোবার আগে পান করুন

৩. কাঁচা পেঁপে – দ্রুত ফলদায়ক

পিরিয়ড না হলে কি খাওয়া উচিত এমন প্রশ্নে পুষ্টিবিদরা কাঁচা পেঁপে সুপারিশ করেন। পেঁপের এনজাইম জরায়ু সংকোচনে সহায়তা করে।

সেবন নির্দেশ:

  • সকালে খালি পেটে ১ কাপ পাকা পেঁপে
  • বা কাঁচা পেঁপের রস ১ চা চামচ
  • সপ্তাহে ৩-৪ বার

৪. দারুচিনি চা – ইনসুলিন নিয়ন্ত্রক

পিরিয়ড না হলে কি খাওয়া উচিত ভাবলে দারুচিনি চা একটি চমৎকার সমাধান। বিশেষ করে PCOS থাকলে এটি বিশেষ উপকারী।

ব্যবহারবিধি:

  • ১ কাপ গরম পানিতে ১ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া
  • দিনে ২ বার পান করুন
  • খাবারের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন

৫. আনারস – প্রাকৃতিক এনজাইম সমৃদ্ধ

পিরিয়ড না হলে কি খাওয়া উচিত জিজ্ঞাসার জবাবে আনারস একটি উৎকৃষ্ট বিকল্প। ব্রোমেলেইন এনজাইম মাসিক চক্র নিয়মিত করতে সাহায্য করে।

সেবন পদ্ধতি:

  • প্রতিদিন ১ কাপ আনারসের টুকরো
  • বা আনারসের রস ১ গ্লাস
  • সকালের নাস্তায় খাওয়া ভালো

৬. বিটরুট – রক্ত বৃদ্ধিকারক

পিরিয়ড না হলে কি খাওয়া উচিত এই চিন্তায় বিটরুট একটি গুরুত্বপূর্ণ খাবার। এটি আয়রন ও ফোলেট সমৃদ্ধ যা রক্ত উৎপাদনে সাহায্য করে।

প্রস্তুত:

  • বিটরুটের জুস ১ গ্লাস সকালে
  • বা সেদ্ধ বিটরুট সালাদ
  • সপ্তাহে ৩-৪ বার

৭. তিলের বীজ – ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ

পিরিয়ড না হলে কি খাওয়া উচিত জানতে চাইলে তিলের বীজ একটি চমৎকার পছন্দ। এটি ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ।

ব্যবহার:

  • ১ চা চামচ তিলের বীজ গরম পানির সাথে খান
  • সকালে খালি পেটে ভালো কাজ করে
  • দুধের সাথেও মিশিয়ে খেতে পারেন

৮. খেজুর – প্রাকৃতিক শক্তিদায়ক

পিরিয়ড না হলে কি খাওয়া উচিত এমন প্রশ্নে খেজুর একটি গুরুত্বপূর্ণ সমাধান। এটি আয়রন ও ফাইবার সমৃদ্ধ।

সেবন নির্দেশ:

  • দিনে ৪-৫টি খেজুর ভিজিয়ে খান
  • দুধের সাথে সেদ্ধ করেও খেতে পারেন
  • সকালের নাস্তায় আদর্শ

৯. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল – ইস্ট্রোজেন নিয়ন্ত্রক

নিয়মিত পিরিয়ড না হলে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল যেমন আমলকী, কমলা, লেবু খেতে পারেন।

ব্যবহার:

  • প্রতিদিন ১টি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল
  • আমলকীর রস ১ চা চামচ
  • সকালে খালি পেটে ভালো

১০. সবুজ শাকসবজি – পুষ্টি ঘাটতি পূরণকারী

পালং শাক, মেথি শাক, ব্রকলি খান। এগুলো ফোলেট ও আয়রন সমৃদ্ধ।

সেবন:

  • দিনে অন্তত ১ কাপ রান্না করা শাক
  • স্যুপ বা জুস করেও খেতে পারেন
  • সপ্তাহে ৫-৬ বার

পরামর্শ: এই খাবারগুলো নিয়মিত খাওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পানি পান করুন, স্ট্রেস কমিয়ে আনুন এবং নিয়মিত হালকা ব্যায়াম করুন। যদি ৩ মাসের বেশি পিরিয়ড বন্ধ থাকে তবে অবশ্যই গাইনোকোলজিস্টের পরামর্শ নিন।

আরও পড়ুন: পিরিয়ডের সময় সেক্স করলে কি হয়? আসল সত্যতা জানুন!

পিরিয়ড নিয়মিত করতে যে অভ্যাসগুলো মেনে চলবেন

১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন

  • প্রতিদিন ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন
  • পানিশূন্যতা হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে
  • গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে আরও ভালো ফল পাবেন

২. নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন

বজ্রাসনে বসা এক তরুণী, পাশে লেবু পানি — মাসিক নিয়মিত রাখতে যোগব্যায়াম ও হাইড্রেশনের গুরুত্ব
বজ্রাসনে বসে পিরিয়ড নিয়মিত রাখার প্রাকৃতিক উপায়
  • সপ্তাহে ৫ দিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করুন
  • বিশেষভাবে উপকারী ব্যায়াম:
    • ইয়োগা (বজ্রাসন, ভদ্রাসন বিশেষভাবে কার্যকর)
    • দ্রুত হাঁটা
    • সাঁতার
    • হালকা এ্যারোবিক্স

৩. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট

  • প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট মেডিটেশন করুন
  • গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন
  • প্রিয় শখ বা কাজে সময় দিন
  • যথেষ্ট বিশ্রাম নিন

৪. পর্যাপ্ত ও নিয়মিত ঘুম

  • রাতে ৭-৮ ঘণ্টা নিরবিচ্ছিন্ন ঘুমান
  • রাত ১০টার মধ্যে ঘুমাতে যান
  • ঘুমানোর আগে মোবাইল/টিভি দেখা বন্ধ করুন
  • অন্ধকার ঘরে ঘুমান

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?

যেসব ক্ষেত্রে অবশ্যই গাইনোকোলজিস্ট দেখাবেন:

  • ৩ মাস বা ৯০ দিনের বেশি পিরিয়ড বন্ধ থাকলে
  • অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি/হ্রাস পেলে
  • মুখে বা শরীরে অতিরিক্ত লোম গজালে
  • গর্ভাবস্থা সন্দেহ হলে
  • তীব্র পেট ব্যথা বা অস্বাভাবিক রক্তপাত হলে

কোন পরীক্ষাগুলো করাতে হতে পারে:

  • হরমোন টেস্ট (FSH, LH, প্রোল্যাক্টিন)
  • থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট
  • পেলভিক আল্ট্রাসাউন্ড
  • PCOS স্ক্রিনিং

মনে রাখবেন: প্রাকৃতিক উপায়ে ১-২ মাস চেষ্টা করার পরও যদি সমস্যা থাকে, তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। দেরি করলে পরিস্থিতি জটিল হতে পারে।

উপসংহার

পিরিয়ড না হলে কি খাওয়া উচিত—এই প্রশ্নের উত্তর এখন আপনার জানা। প্রাকৃতিক খাবার ও স্বাস্থ্যকর অভ্যাস পিরিয়ড নিয়মিত করতে সাহায্য করবে। তবে দীর্ঘদিন সমস্যা থাকলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

FAQS

পিরিয়ড বন্ধ থাকলে আমি কী খেতে পারি?

আপনি কাঁচা পেঁপে, আদা, তিল বীজ, মেথি বীজ, দই, ও ফারমেন্টেড খাবার খেতে পারেন। এগুলো হরমোন ব্যালেন্স করে।

পিরিয়ড আনতে কোন ফল খাওয়া উচিত?

পেঁপে, আনারস, ডালিম ও বেরি জাতীয় ফল পিরিয়ড আনতে সহায়ক।

প্রাকৃতিকভাবে পিরিয়ড শুরু করতে কী খাব?

আদা চা, তিল ও মেথি বীজ, লেবু পানি এবং হালকা ব্যায়াম সহায়তা করতে পারে।

পিরিয়ড না হলে আদা কি খাওয়া যাবে?

হ্যাঁ, আদা খাওয়া নিরাপদ এবং এটি জরায়ুর কার্যক্রম সক্রিয় করে।

পিরিয়ড নিয়মিত করতে দই খাওয়া কি ভালো?

দইয়ের প্রোবায়োটিক উপাদান হরমোন ব্যালেন্স করে পিরিয়ড নিয়মিত রাখতে সাহায্য করে।

পিরিয়ড শুরু করাতে তিল বীজ কীভাবে কাজ করে?

তিল বীজে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড ও লিগন্যান হরমোন সমতা বজায় রাখতে সহায়ক।

পিরিয়ড মিস হলে কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত?

ক্যাফেইন, ঠান্ডা পানীয়, অতিরিক্ত প্রসেসড ফুড ও ফাস্ট ফুড এড়ানো উচিত।

কাঁচা পেঁপে খেলে কি পিরিয়ড আসে?

হ্যাঁ, কাঁচা পেঁপে জরায়ুর পেশি কনট্র্যাকশন বাড়িয়ে পিরিয়ড আনতে সাহায্য করে।

পিরিয়ড মিস হলে হরমোন ঠিক করতে কোন খাবার খেতে হবে?

ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার, বাদাম, সবুজ শাকসবজি, দই এবং প্রাকৃতিক প্রোটিন খাওয়া জরুরি।

কতদিন পিরিয়ড না হলে ডাক্তার দেখানো দরকার?

যদি দুই মাসের বেশি সময় ধরে পিরিয়ড না হয় অথবা পেট ব্যথা, ওজন পরিবর্তন, বা হরমোনজনিত উপসর্গ থাকে, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

পিরিয়ড কতদিন বন্ধ থাকলে চিন্তার কারণ?

যদি ৯০ দিন বা ৩ মাস ধরে পিরিয়ড না হয়, তাহলে অবশ্যই গাইনোকোলজিস্ট দেখাবেন। তবে ৪৫ দিন পর থেকেই সচেতন হওয়া ভালো।

আরও পড়ুন:

দাদ হলে কি খাওয়া নিষেধ? বিস্তারিত গাইড!

হাই প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিত?

পিঠের ব্রণ দূর করার উপায়: ৮টি কার্যকর ঘরোয়া টিপস!


সোশাল মিডিয়ায় শোয়ার করুন!

Leave a Comment