কেমন লাগবে যদি আপনাকে বলা হয় আপনার শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক সম্পর্কে আপনি স্পষ্ট ধারণা রাখেন না? রক্তচাপ তেমনই একটি বিষয়। অনেকেই জানেন হাই প্রেসার ক্ষতিকর, কিন্তু হাই প্রেসার কত থেকে কত হলে তা উদ্বেগের কারণ হতে পারে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা জরুরি। আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা এই বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। আমাদের লক্ষ্য হলো, উচ্চ রক্ত চাপ কত থেকে কত পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়গুলো চিহ্নিত করা এবং এই সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা দেওয়া। তাই, নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে জানতে আমাদের সাথেই থাকুন।
রক্তচাপ কী এবং কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?
রক্তচাপ হলো আমাদের ধমনীর ভেতরের রক্তের চাপ। যখন হৃদপিণ্ড সংকুচিত হয় (সিস্টোলিক চাপ) এবং যখন হৃদপিণ্ড বিশ্রাম নেয় (ডায়াস্টোলিক চাপ), তখন এই চাপ মাপা হয়। রক্তচাপকে দুটি সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা হয়, যেমন ১২০/৮০ মিমি Hg। এই দুটি সংখ্যা আমাদের হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং রক্তনালীর অবস্থা সম্পর্কে অনেক তথ্য দিতে পারে। তাই, হাই প্রেসার কত থেকে কত তা জানা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্বাভাবিক রক্তচাপ কত?
একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির স্বাভাবিক রক্তচাপ সাধারণত ১২০/৮০ মিমি Hg এর নিচে থাকে। সিস্টোলিক চাপ (উপরের সংখ্যা) ১২০ এর কম এবং ডায়াস্টোলিক চাপ (নিচের সংখ্যা) ৮০ এর কম হলে তাকে স্বাভাবিক রক্তচাপ বলা হয়। তবে, বয়স এবং শারীরিক অবস্থার সাথে সাথে এই মাত্রা কিছুটা পরিবর্তিত হতে পারে। হাই প্রেসার কত থেকে কত শুরু হয়, তা জানার আগে স্বাভাবিক মাত্রাটি জানা দরকার।
আরও পড়ুন:উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণগুলো কী কী? জানুন বিস্তারিত!
হাই প্রেসার কত থেকে কত ধরা হয়?
যখন রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তখন তাকে হাই প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ বলা হয়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন (AHA) এর গাইডলাইন অনুযায়ী, হাই প্রেসার কত থেকে কত তা বিভিন্ন পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে:
১. উন্নত রক্তচাপ (Elevated): সিস্টোলিক চাপ ১২০-১২৯ মিমি Hg এবং ডায়াস্টোলিক চাপ ৮০ মিমি Hg এর কম। এই পর্যায়টিকে হাই প্রেসারের প্রাথমিক ধাপ হিসেবে ধরা হয়।
২. প্রথম ধাপের উচ্চ রক্তচাপ (Stage 1 Hypertension): সিস্টোলিক চাপ ১৩০-১৩৯ মিমি Hg অথবা ডায়াস্টোলিক চাপ ৮০-৮৯ মিমি Hg। এই পর্যায়ে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনার এবং ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।
৩. দ্বিতীয় ধাপের উচ্চ রক্তচাপ (Stage 2 Hypertension): সিস্টোলিক চাপ ১৪০ মিমি Hg বা তার বেশি অথবা ডায়াস্টোলিক চাপ ৯০ মিমি Hg বা তার বেশি। এই পর্যায়ে সাধারণত ঔষধের প্রয়োজন হয়। ৪. হাইপারটেনসিভ ক্রাইসিস (Hypertensive Crisis): সিস্টোলিক চাপ ১৮০ মিমি Hg এর বেশি অথবা ডায়াস্টোলিক চাপ ১২০ মিমি Hg এর বেশি। এটি একটি জরুরি অবস্থা এবং দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন।
নিচে টেবিলের সাহায্য তুলে ধরা হল:
রক্তচাপ (mm Hg) | রক্তচাপের অবস্থান | মন্তব্য |
---|---|---|
120/80 বা তার কম | স্বাভাবিক | ভালো রক্তচাপ হিসেবে ধরা হয়। |
120-129 / 80-84 | প্রি-হাইপারটেনশন | প্রথম স্তরের প্রাথমিক অবস্থা। |
130-139 / 80-89 | স্টেজ 1 হাইপারটেনশন | হালকা উচ্চ রক্তচাপ। |
140/90 বা তার বেশি | স্টেজ 2 হাইপারটেনশন | তীব্র উচ্চ রক্তচাপ। |
180/120 বা তার বেশি | ক্রাইসিস (উচ্চ বিপদজনক) | জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। |
আরও পড়ুন:হাই প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিত?
হাই প্রেসারের ঝুঁকি
হাই প্রেসার একটি নীরব ঘাতক হিসেবে পরিচিত, কারণ অনেক সময় এর কোনো সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায় না। তবে, দীর্ঘমেয়াদী হাই প্রেসার শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের ক্ষতি করতে পারে, যেমন:
- হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
- কিডনির কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে।
- চোখের ক্ষতি করতে পারে।
- মস্তিষ্কের রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে করণীয়
যদি আপনার রক্তচাপ হাই প্রেসারের পর্যায়ে থাকে, তবে তা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। হাই প্রেসার কত থেকে কত তা জানার পাশাপাশি এর নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কেও জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কিছু সাধারণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি হলো:
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস: খাবারে লবণের পরিমাণ কমানো, ফল ও সবজি বেশি খাওয়া, এবং চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করা।
২. নিয়মিত ব্যায়াম: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য মাঝারি ধরণের ব্যায়াম করা।
৩. ওজন নিয়ন্ত্রণ: শরীরের সঠিক ওজন বজায় রাখা।
৪. ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার: এই অভ্যাসগুলো রক্তচাপ বাড়াতে পারে।
৫. মানসিক চাপ কমানো: যোগা, মেডিটেশন বা শখের কাজে সময় দেওয়া।
৬. ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করা।
এই পদক্ষেপগুলো হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। আপনার রক্তচাপের পর্যায়ের উপর নির্ভর করে ডাক্তার আপনাকে সঠিক পরামর্শ দেবেন।
কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন?
যদি আপনার রক্তচাপ উন্নত পর্যায়ে থাকে বা প্রথম বা দ্বিতীয় ধাপের হাই প্রেসারে থাকে, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। হাইপারটেনসিভ ক্রাইসিসের ক্ষেত্রে তো দ্রুত ডাক্তারের সহায়তা প্রয়োজন। নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করানো এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার: আপনার হাই প্রেসার কত থেকে কত জানুন, সুস্থ থাকুন
হাই প্রেসার কত থেকে কত – এই বিষয়ে একটি স্পষ্ট ধারণা রাখা আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রথম ধাপ। নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ করুন এবং যদি তা স্বাভাবিকের বাইরে থাকে, তবে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সুস্থ জীবন যাপনের জন্য নিজের শরীরের প্রতি যত্ন নেওয়া অপরিহার্য।
দ্রষ্টব্য
এই ব্লগ পোস্টটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্য। কোনো স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
FAQS:
সিস্টোলিক চাপ ১৮০ মিমি Hg এর বেশি অথবা ডায়াস্টোলিক চাপ ১২০ মিমি Hg এর বেশি হলে তা বিপদজনক।
স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রা হলো ১২০/৮০ মিমি Hg এর নিচে।
প্রথম ধাপের হাই প্রেসার হলো সিস্টোলিক চাপ ১৩০-১৩৯ মিমি Hg অথবা ডায়াস্টোলিক চাপ ৮০-৮৯ মিমি Hg।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলা উচিত।
দ্বিতীয় ধাপের হাই প্রেসার শুরু হয় সিস্টোলিক চাপ ১৪০ মিমি Hg বা তার বেশি অথবা ডায়াস্টোলিক চাপ ৯০ মিমি Hg বা তার বেশি হলে।
হাইপারটেনসিভ ক্রাইসিস হলো যখন রক্তচাপ ১৮০/১২০ মিমি Hg এর বেশি হয় এবং এটি একটি জরুরি অবস্থা।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে রক্তচাপ কিছুটা বাড়তে পারে।
স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হাই প্রেসার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।
শান্ত পরিবেশে বসে, বাহু হৃদপিণ্ডের স্তরে রেখে রক্তচাপ মাপা উচিত।
আরও পড়ুন
পিরিয়ডের সময় সেক্স করলে কি হয়? আসল সত্যতা জানুন!
দাদের ঔষধ কি? পুরাতন দাদের চিকিৎসা ও ঘরোয়া সমাধান
হাত পা জ্বালাপোড়া থেকে মুক্তির উপায়: কারণ, ঘরোয়া প্রতিকার ও চিকিৎসা
Referance: Understanding Blood Pressure Readings