জিনসেং ট্যাবলেট এর কাজ কি? জানুন এর উপকারিতা ও ব্যবহার বিধি!

জিনসেং নামটি শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু জিনসেং ট্যাবলেট এর কাজ কি, এই সম্পর্কে অনেকেই পরিষ্কার ধারণা রাখেন না। প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে আধুনিক যুগেও জিনসেংকে প্রাকৃতিক ওষুধের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে ধরা হয়। এটি মূলত একটি ঔষধি গাছ, যার শিকড় বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় অত্যন্ত উপকারী। বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি এই জিনসেং এর নির্যাস দিয়ে ক্যাপসুল, সিরাপ, এবং ট্যাবলেট তৈরি করে। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জিনসেং ট্যাবলেট এর কাজ কি, এর উপকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, এবং জিনসেং ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম সহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করব।

জিনসেং কি?

জিনসেং একটি ভেষজ উদ্ভিদ যা মূলত এশিয়াতে জন্মায়। এর মূল ঔষধি গুণ সম্পন্ন এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এটি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। জিনসেং-এর প্রধান দুটি প্রকারভেদ হলো কোরিয়ান বা রেড জিনসেং (Panax ginseng) এবং আমেরিকান জিনসেং (Panax quinquefolius)। উভয় প্রকার জিনসেং-এর কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এবং উপকারিতা রয়েছে। বাজারে জিনসেং সিরাপ এবং জিনসেং পাউডারও পাওয়া যায়, তবে ট্যাবলেট ব্যবহারের সুবিধা এবং সঠিক ডোজের নিশ্চয়তার জন্য অনেকেই পছন্দ করেন।

আরও পড়ুন:


ইন্টিমেট ট্যাবলেট এর কাজ: দাম, উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম


সেক্সে রসুনের অপকারিতা কি: রসুন খেলে যৌনক্ষমতায় কি প্রভাব পড়ে?

জিনসেং ট্যাবলেট এর কাজ কি?

এই প্রশ্নের উত্তর এক কথায় দেওয়া সম্ভব নয়। জিনসেং এর মূল কার্যকারিতা হলো শরীরের সামগ্রিক কার্যকারিতা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা। এটি একটি “অ্যাডাপটোজেন” হিসেবে কাজ করে, যা শরীরকে মানসিক এবং শারীরিক চাপ সামলাতে সাহায্য করে। সাধারণত, জিনসেং ট্যাবলেট নিম্নোক্ত স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোতে কার্যকর ভূমিকা রাখে:

  • শারীরিক ও মানসিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি: জিনসেং শরীর ও মস্তিষ্কের শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করে, যার ফলে আপনি দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করার শক্তি পান।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: এটি শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে, যার ফলে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে।
  • স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বৃদ্ধি: জিনসেং মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে, যা স্মৃতিশক্তি এবং শেখার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করা: এটি পুরুষ ও মহিলাদের উভয়ের যৌন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি লিবিডো বা যৌন আকাঙ্ক্ষা বাড়াতে এবং ইরেক্টাইল ডিসফাংশন (ED) দূর করতে সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ: কিছু গবেষণা বলছে, জিনসেং রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

আপনার যদি বিশেষ কোনো ব্র্যান্ডের জিনসিন প্লাস এর কাজ কি বা অন্য কোনো ধরনের জিনসেং সিরাপ এর কাজ কি জানতে চান, তাহলে সেই পণ্যের নির্দিষ্ট নির্দেশনা দেখে নেওয়া উচিত। কারণ বিভিন্ন কোম্পানির পণ্যে জিনসেং এর পাশাপাশি আরও কিছু উপাদান থাকতে পারে, যার কারণে তাদের কার্যকারিতা কিছুটা ভিন্ন হতে পারে।

অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে জিনসেং কোনটা ভালো? কোরিয়ান রেড জিনসেং সাধারণত শক্তি বৃদ্ধি এবং শারীরিক কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পরিচিত, অন্যদিকে আমেরিকান জিনসেং মানসিক প্রশান্তি এবং স্ট্রেস কমানোর জন্য বেশি পরিচিত। তবে, ট্যাবলেটের ক্ষেত্রে প্রস্তুতকারক কোন প্রকার জিনসেং ব্যবহার করছেন, তার উপর কার্যকারিতা নির্ভর করে।

জিনসেং ট্যাবলেট এর উপকারিতা

জিনসেং ট্যাবলেট এর উপকারিতা অনেক এবং এটি শরীরের বিভিন্ন সিস্টেমের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। নিয়মিত সেবনে এটি নিম্নলিখিত সুবিধাগুলো দিতে পারে:

  • ক্লান্তি ও দুর্বলতা দূর করে শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • মনোযোগ, একাগ্রতা এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে মানসিক কর্মক্ষমতা বাড়ায়।
  • স্ট্রেস ও উদ্বেগ কমায়, মানসিক শান্তি এনে দেয়।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • শারীরিক সহনশীলতা বাড়ায়, যা ব্যায়াম বা কঠিন কাজের সময় কাজে লাগে।
  • কিছু ক্ষেত্রে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
  • পুরুষদের যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে, যেমন ইরেক্টাইল ডিসফাংশন এবং কামেচ্ছা বৃদ্ধি।

অনেকে জিনসেং খেলে কি হয় জানতে চান। সাধারণভাবে, সঠিক ডোজে জিনসেং সেবন করলে শারীরিক ও মানসিকভাবে আপনি আরও প্রাণবন্ত এবং কর্মক্ষম অনুভব করতে পারেন।

জিনসেং এর উপকারিতা

অনেকেই শুধু জিনসেং এর কাজ কি এইটুকু জেনে সন্তুষ্ট থাকেন, কিন্তু এর আসল উপকারিতা অনেক বিস্তৃত।

  • হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস: জিনসেং রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতেও ভূমিকা রাখে। এটি হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে গুরুত্বপূর্ণ।
  • ক্যান্সার প্রতিরোধ: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে জিনসেং-এ থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান কিছু নির্দিষ্ট ক্যান্সারের কোষ বৃদ্ধি রোধ করতে পারে।
  • উজ্জ্বল ত্বক এবং চুল: এটি ত্বকের জন্য খুব উপকারী। জিনসেং রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, যা ত্বককে সতেজ রাখে এবং চুলের গোড়ায় পুষ্টি সরবরাহ করে।
  • হরমোনের ভারসাম্য রক্ষা: এটি শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা বিশেষ করে মহিলাদের মেনোপজের সময় বা অনিয়মিত মাসিকের সমস্যায় উপকারী হতে পারে।

আপনি যদি ট্যাবলেট, ক্যাপসুল বা জিনসেং সিরাপ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান, তাহলে মনে রাখবেন যে মূল উপাদান জিনসেং-এর কার্যকারিতা সব ক্ষেত্রেই প্রায় একই রকম। তবে তরল সিরাপ দ্রুত শোষিত হতে পারে, যা কিছু ক্ষেত্রে দ্রুত ফল দেয়।

বাংলাদেশে  জিনসেং ট্যাবলেট এর দাম ও বিভিন্ন ব্র্যান্ড

জিনসেং ট্যাবলেট এর দাম কত, তা নির্ভর করে ব্র্যান্ড, ট্যাবলেটের পরিমাণ এবং গুণগত মানের উপর। বাজারে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির জিনসেং ক্যাপসুল পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বেশ কিছু ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি জিনসেং ট্যাবলেট বাজারজাত করে। কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ড, তাদের প্রস্তুতকারক এবং আনুমানিক দাম নিচে দেওয়া হলো:

  • Gintex: স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস। প্রতি ক্যাপসুলের দাম প্রায় ১০-১২ টাকা।
  • Ginsina: ইবনে সিনা ফার্মাসিউটিক্যালস। প্রতি ক্যাপসুলের দাম প্রায় ৯-১০ টাকা।
  • Recoseng: ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস। প্রতি ক্যাপসুলের দাম প্রায় ৬-৭ টাকা।
  • Ginera 500: রেনাটা লিমিটেড। প্রতি ক্যাপসুলের দাম প্রায় ২২-২৩ টাকা।
  • Anseng-500: এরিস্টোফার্মা। প্রতি ক্যাপসুলের দাম প্রায় ১৮-২০ টাকা।
  • Panaxin 500: অপসোনিন ফার্মা। প্রতি ক্যাপসুলের দাম প্রায় ১৩-১৫ টাকা।
  • Ginseng 500mg (Imprex): ইমপেক্স ল্যাবরেটরিজ। প্রতি ক্যাপসুলের দাম প্রায় ৩৫-৩৬ টাকা।

দামগুলো স্থান ও সময়ভেদে ভিন্ন হতে পারে।

জিনসেং ট্যাবলেট খাওয়ার  নিয়ম

জিনসেং ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম খুবই সহজ। সাধারণত, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন একটি বা দুটি ক্যাপসুল সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে, এটি নির্ভর করে ক্যাপসুল বা ট্যাবলেটের শক্তির উপর। তাই পণ্যটির প্যাকেজিং-এ দেওয়া নির্দেশিকা বা আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুসরণ করা সবচেয়ে ভালো।

  • কখন খাবেন: সাধারণত, সকালে বা দুপুরে খাবারের পর জিনসেং সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়, কারণ এটি শক্তি বাড়ায় এবং রাতে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
  • কত দিন খাবেন: এটি একটানা ৩-৬ মাস পর্যন্ত সেবন করা যেতে পারে, তবে এর পর কিছুদিনের বিরতি দেওয়া ভালো। দীর্ঘ মেয়াদি ব্যবহারের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

জিনসেং ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

যদিও জিনসেং সাধারণত নিরাপদ হিসেবে বিবেচিত, তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে জিনসেং ট্যাবলেট এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। সবার শরীর একরকম নয়, তাই কারও কারও ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত সমস্যাগুলো দেখা যেতে পারে:

  • মাথাব্যথা এবং ঘুম না হওয়া: এটি অতিরিক্ত শক্তি প্রদান করায় অনেকের ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
  • বুক ধড়ফড় করা: কিছু ক্ষেত্রে এটি হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দিতে পারে, বিশেষ করে যাদের হৃদরোগ আছে।
  • পেটে অস্বস্তি: অনেকের ক্ষেত্রে পেটে গ্যাস, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা হতে পারে।
  • রক্তচাপের পরিবর্তন: যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে এটি রক্তচাপের উপর ভিন্ন প্রভাব ফেলতে পারে।

যদি আপনি কোনো ওষুধের সাথে জিনসেং সেবন করেন, তাহলে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। বিশেষ করে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা রক্ত জমাট বাঁধার ওষুধ যারা সেবন করেন, তাদের জন্য এটি খুবই জরুরি।

উপসংহার

আমরা আশা করি, এই আর্টিকেলটি পড়ার পর জিনসেং ট্যাবলেট এর কাজ কি, এর উপকারিতা এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে আপনার একটি পরিষ্কার ধারণা হয়েছে। মনে রাখবেন, জিনসেং একটি উপকারী ঔষধি হলেও এটি কোনো ম্যাজিক পিল নয়। এর কার্যকারিতা নির্ভর করে আপনার শরীরের অবস্থা, সেবনের নিয়ম এবং সঠিক ডোজের উপর। যেকোনো নতুন সাপ্লিমেন্ট শুরু করার আগে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া সর্বদা গুরুত্বপূর্ণ। এটি শুধু আপনার শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করবে না, বরং অপ্রত্যাশিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থেকেও রক্ষা করবে।

দ্রষ্টব্য

এই ব্লগ পোস্টটি শুধুমাত্র তথ্যের উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। জিনসেং ট্যাবলেট ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

Call to action:

আরও স্বাস্থ্য টিপস পেতে আমাদের হোম পেজটি ভিজিট করুন bangladisha.com। প্রতিদিন নতুন নতুন আপডেট পেতে পুশ নটিফিকেশন অন করে রাখুন। আমাদের পোস্টটি আপনার কাছে হেল্পফুল মনে হলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আপনার কোন মন্তব্য থাকলে কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।

 

আরও পড়ুন: Emistat 8 mg কি কাজ করে? বমির চিকিৎসায় এর ব্যবহার জানুন!

Ref: Asian Ginseng: Usefulness and Safety | NCCIH

👉সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করুন👇

Leave a Comment