অতিরিক্ত ঘামা বা হাইপারহাইড্রোসিস গরম আসলেই আমাদের জীবনকে অস্বস্তিকর করে তোলে। আপনি জানেন কি? শরীর অতিরিক্ত ঘামার কারণ কি? বা অতিরিক্ত ঘামের কারণ কি? এখানে আমার অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। পাশাপাশি, অতিরিক্ত ঘাম কিসের লক্ষণ? রক্তে কিসের পরিমাণ কমে গেলে অতিরিক্ত ঘাম হয়, তা নিয়েও তথ্য দিব।
শরীর অতিরিক্ত ঘামার কারণ কি?

অতিরিক্ত ঘামার পেছনে রয়েছে বিভিন্ন শারীরিক ও মানসিক কারণ। নিচে কিছু প্রধান কারণ উল্লেখ করা হলো:
1. জেনেটিক কারণ
অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঘামা বংশগত সমস্যা। পরিবারের কারও এই সমস্যা থাকলে আপনারও হতে পারে। জেনেটিক কারণে হাইপারহাইড্রোসিস হতে পারে, যা সাধারণত হাত, পা, বা বগলে বেশি দেখা যায়।
2. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ
মানসিক চাপ, টেনশন, বা উদ্বেগের কারণে শরীরে অ্যাড্রেনালিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ঘাম বৃদ্ধি করে। উদ্বেগজনিত সমস্যা যেমন প্যানিক অ্যাটাক বা সোশ্যাল অ্যাংজাইটির কারণে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
3. থাইরয়েড সমস্যা
হাইপারথাইরয়েডিজম বা থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণের কারণে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থি অতিরিক্ত সক্রিয় হলে শরীরের মেটাবলিজম বেড়ে যায়, ফলে ঘাম বেশি হয়।
4. অতিরিক্ত ওজন
অতিরিক্ত ওজনের কারণে শরীরে তাপ উৎপন্ন হয় বেশি, ফলে ঘামও বেশি হয়। স্থূল ব্যক্তিদের শরীরে ফ্যাট জমে
5. রক্তে শর্করা বা মিনারেলের অভাব
রক্তে শর্করা (গ্লুকোজ) বা ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ কমে গেলে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে রক্তে শর্করা কমে গেলে ঘাম, মাথা ঘোরা, এবং দুর্বলতা দেখা দেয়।
6. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু ওষুধের সাইড ইফেক্ট হিসেবে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। যেমন: অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, ব্লাড প্রেশারের ওষুধ, বা হরমোনাল ওষুধ।
অতিরিক্ত ঘাম কিসের লক্ষণ?
অতিরিক্ত ঘামা শুধু অস্বস্তিকর নয়, এটি বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। যেমন:
1. হাত ও পায়ের তালু ঘামা
এটি হাইপারহাইড্রোসিসের সাধারণ লক্ষণ। হাত ও পায়ের তালু ঘামা মানসিক চাপ বা জেনেটিক কারণেও হতে পারে।
2. মুখ ও কপাল ঘামা
মুখ ও কপাল ঘামা মানসিক চাপ বা থাইরয়েড সমস্যার ইঙ্গিত দেয়। এটি হট ফ্ল্যাশ বা মেনোপজের সময়ও হতে পারে।
3. রাতে ঘামা
রাতে ঘামা টিবি, HIV, বা অন্যান্য সংক্রমণের লক্ষণ হতে পারে। এটি ক্যান্সার বা হরমোনাল সমস্যারও ইঙ্গিত দিতে পারে।
4. শরীরের নির্দিষ্ট অংশে ঘাম
বগল, পিঠ, বা বুকে ঘাম হওয়া হাইপারহাইড্রোসিসের লক্ষণ। এটি স্থানীয় বা পুরো শরীরে হতে পারে।
অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণ ও প্রতিকার
অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে নিচের প্রতিকারগুলো অনুসরণ করুন:
1. অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট ব্যবহার
শক্তিশালী অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট ব্যবহার করুন, যা ঘামের গ্রন্থিগুলোকে ব্লক করে। ডাক্তারের পরামর্শে ক্লিনিক্যাল স্ট্রেংথ অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট ব্যবহার করতে পারেন।
2. জীবনযাত্রার পরিবর্তন
- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলুন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
- মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করুন।
3. চিকিৎসকের পরামর্শ
যদি সমস্যা গুরুতর হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বোটক্স ইনজেকশন বা সার্জারির মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা যায়।
4. ঘরোয়া উপায় (H3)
- পাতিলেবুর রস ব্যবহার করুন।
- গ্রিন টি পান করুন।
- বেকিং সোডা পেস্ট প্রয়োগ করুন।
রক্তে কিসের পরিমাণ কমে গেলে অতিরিক্ত ঘাম হয়?
রক্তে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের পরিমাণ কমে গেলে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে। এই উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে শর্করা (গ্লুকোজ), ম্যাগনেসিয়াম, এবং পটাসিয়াম। নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো:
1. রক্তে শর্করা কমে গেলে
- কেন হয়?
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ইনসুলিন বা ওষুধের কারণে রক্তে শর্করা কমে যেতে পারে। এছাড়াও, দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলেও শর্করা কমে যায়। - লক্ষণ:
- অতিরিক্ত ঘাম
- মাথা ঘোরা
- দুর্বলতা
- করণীয়:
দ্রুত শর্করা সমৃদ্ধ খাবার (যেমন: ফলের রস, গ্লুকোজ ট্যাবলেট) খান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
2. রক্তে ম্যাগনেসিয়াম কমে গেলে
- কেন হয়?
ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হলে নার্ভাস সিস্টেম অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে ঘাম বৃদ্ধি করে। - লক্ষণ:
- পেশিতে টান
- ক্লান্তি
- করণীয়:
ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (যেমন: সবুজ শাকসবজি, বাদাম) খান।
3. রক্তে পটাসিয়াম কমে গেলে
- কেন হয়?
পটাসিয়ামের অভাব হলে ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালেন্স নষ্ট হয়, যা ঘাম বৃদ্ধি করে। - লক্ষণ:
- পেশিতে দুর্বলতা
- হৃদস্পন্দন অনিয়মিত হওয়া
- করণীয়:
পটাসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার (যেমন: কলা, আলু) খান।
উপসংহার
শরীর অতিরিক্ত ঘামার কারণ কি, অতিরিক্ত ঘাম কিসের লক্ষণ, আশাকির এই সকল প্রশ্নের উত্তর আপনি পেয়েছেন! অতিরিক্ত ঘামা একটি সাধারণ সমস্যা হলেও এর পেছনে গুরুতর শারীরিক বা মানসিক কারণ থাকতে পারে। তাই, সঠিক কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা নিলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। যদি আপনার অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা থাকে, তাহলে আজই একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
আরও পড়ুন:
অতিরিক্ত ঘাম দূর করার ঘরোয়া উপায়: ১০টি প্রাকৃতিক সমাধানের গাইড!
গা ঘামার সমস্যা? জেনে নিন কোন ভিটামিনের অভাবে গা ঘামে!
অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ? কারণ ও প্রতিকার
FAQS
মুখের অতিরিক্ত ঘাম দূর করার জন্য নিচের উপায়গুলো অনুসরণ করুন:
অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট ব্যবহার: মুখের ত্বকের জন্য হালকা অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট ব্যবহার করুন। তবে মুখে ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম: মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন বা যোগব্যায়াম করুন। মানসিক চাপ কমলে মুখের ঘামও কমবে।
গ্রিন টি পান করুন: গ্রিন টি শরীরের টক্সিন দূর করে এবং ঘাম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
পানির পরিমাণ বাড়ান: শরীর হাইড্রেটেড রাখলে ঘামের পরিমাণ কমে।
শিশুর অতিরিক্ত ঘাম বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হতে পারে:
হৃদরোগ: জন্মগত হৃদরোগের কারণে শিশুর অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
থাইরয়েড সমস্যা: হাইপারথাইরয়েডিজমের কারণে শিশুর ঘাম বেশি হতে পারে।
সংক্রমণ: টিবি বা অন্যান্য সংক্রমণের কারণে শিশুর রাতে ঘাম হতে পারে।
ভিটামিন ডি এর অভাব: ভিটামিন ডি এর অভাবেও শিশুর ঘাম বেশি হতে পারে।
অতিরিক্ত ঘাম কমানোর জন্য নিচের ঔষধগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে:
অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট: শক্তিশালী অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট ব্যবহার করুন, যা ঘামের গ্রন্থিগুলোকে ব্লক করে।
বোটক্স ইনজেকশন: বোটক্স ইনজেকশন ঘামের গ্রন্থিগুলোকে অস্থায়ীভাবে ব্লক করে।
অ্যান্টি-হাইপারহাইড্রোসিস ওষুধ: চিকিৎসকের পরামর্শে অ্যান্টি-হাইপারহাইড্রোসিস ওষুধ ব্যবহার করুন।
হোমিওপ্যাথিক ঔষধ: হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসাও অতিরিক্ত ঘাম কমাতে সাহায্য করতে পারে।
অতিরিক্ত ঘামের কারণে দুর্গন্ধ হলে নিচের উপায়গুলো অনুসরণ করুন:
নিয়মিত গোসল করুন: দিনে অন্তত একবার গোসল করুন এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান ব্যবহার করুন।
অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট ব্যবহার করুন: শক্তিশালী অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট ব্যবহার করুন, যা ঘাম এবং দুর্গন্ধ কমায়।
পরিষ্কার কাপড় পরুন: সুতি কাপড় পরুন এবং প্রতিদিন কাপড় পরিবর্তন করুন।
প্রোবায়োটিক খাবার খান: দই বা প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট খান, যা শরীরের দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করে।