মাথা ঘোরা বা ভার্টিগো একটি অস্বস্তিকর অনুভূতি, যা দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারে। এর সাথে বমি বমি ভাবও থাকতে পারে। এই ধরনের সমস্যায় অনেক সময় ডাক্তার একটি ঔষধের নাম বলেন – রিভার্ট ২০। কিন্তু রিভার্ট ২০ এর কাজ কি? এটি কিভাবে কাজ করে, किन किन সমস্যার সমাধানে এটি ব্যবহার করা হয়, এর ডোজ বা নিয়মাবলী কী এবং এর সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াগুলোই বা কী কী? আজকের ব্লগ পোস্টে আমরা এই সমস্ত জরুরি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। যারা মাথা ঘোরা বা ভার্টিগোর সমস্যায় ভুগছেন এবং রিভার্ট ২০ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, তাদের জন্য এই তথ্যগুলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হতে পারে। তাহলে চলুন, জেনে নেওয়া যাক রিভার্ট ২০ এর কাজ কি!
রিভার্ট ২০ ওষুধ আসলে কী?
রিভার্ট ২০ মূলত সিনারিজিন (Cinnarizine) এবং ডাইমেনহাইড্রিনেট (Dimenhydrinate) নামক দুটি ঔষধের সমন্বয়ে তৈরি একটি ট্যাবলেট। প্রতিটি ট্যাবলেটে ২০ মিগ্রা সিনারিজিন এবং ৪০ মিগ্রা ডাইমেনহাইড্রিনেট থাকে। এটি বাংলাদেশে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড (Incepta Pharmaceuticals Ltd.) দ্বারা উৎপাদিত হয়। প্রতি স্ট্রিপে ১০টি ট্যাবলেট থাকে এবং এর বাজার মূল্য প্রায় ২০.৯২ টাকা (পরিবর্তনশীল)। রিভার্ট ২০ প্রধানত মাথা ঘোরা বা ভার্টিগোর চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।
রিভার্ট ২০ এর কাজ কি?
তাহলে, রিভার্ট ২০ এর কাজ কি? রিভার্ট ২০ দুটি উপাদানের সমন্বয়ে কাজ করে:
১. সিনারিজিন: এটি একটি ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার, যা ভেতরের কানের রক্তনালীগুলোর সংকোচন প্রতিরোধ করে। এর ফলে কানের মাইক্রোসার্কুলেশন উন্নত হয়। ২. ডাইমেনহাইড্রিনেট: এটি একটি অ্যান্টিহিস্টামিন, যা মস্তিষ্কের রাসায়নিক বার্তাবাহক হিস্টামিনের কার্যকারিতা বন্ধ করে। ভার্টিগোর কারণে যে হালকা মাথা ঘোরা ভাব হয়, তা কমাতে এটি সাহায্য করে।
এই দুটি উপাদানের সম্মিলিত ক্রিয়ার মাধ্যমেই রিভার্ট ২০ এর কাজ মাথা ঘোরা এবং এর সাথে যুক্ত বমি বমি ভাব বা অন্যান্য উপসর্গগুলো উপশম করা। সুতরাং, রিভার্ট ২০ এর কাজ মূলত ভেতরের কানের রক্ত সঞ্চালন উন্নত করা এবং ভার্টিগোর জন্য দায়ী রাসায়নিক প্রক্রিয়াকে বাধা দেওয়া।
read more: Zofra কিসের ওষুধ? কাজ, ডোজ ও দাম| বমি ও বমি বমি ভাবের সমাধান
রিভার্ট ২০ কি কি রোগের উপশম করে?
এতক্ষণে আমরা জেনেছি রিভার্ট ২০ এর কাজ কি। এবার চলুন জেনে নেই এটি ঠিক किन किन পরিস্থিতিতে ব্যবহার করা হয়। রিভার্ট ২০ প্রধানত নিম্নলিখিত সমস্যাগুলোর উপশমে ব্যবহৃত হয়:
- ভার্টিগো (Vertigo): মাথা ঘোরা বা ঘূর্ণির অনুভূতি, যা ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে। রিভার্ট ২০ এর কাজ এই সমস্যা সমাধানে অত্যন্ত কার্যকর।
- মোশন সিকনেস (Motion Sickness): গাড়ি, বাস বা অন্য কোনো যানবাহনে ভ্রমণের সময় বমি বমি ভাব, মাথা ঘোরা কমাতে রিভার্ট ২০ ব্যবহার করা হয়।
- মেনিয়ার্স রোগ (Meniere’s Disease): এই অন্তঃকর্ণের রোগের কারণে মাথা ঘোরা, কানে ঝনঝন শব্দ এবং শ্রবণক্ষমতা কমে যেতে পারে। রিভার্ট ২০ এই রোগের উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- অন্যান্য রোগ (Other Vestibular Disorders): অন্তঃকর্ণের অন্যান্য ভারসাম্য জনিত সমস্যাতেও রিভার্ট ২০ এর কাজ উপশম দিতে পারে।
সুতরাং, রিভার্ট ২০ এর কাজ মূলত মাথা ঘোরা এবং এর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন অস্বস্তিকর অনুভূতি থেকে মুক্তি দেওয়া।
read more: Traxyl 500 কি কাজ করে? কার্যকারিতা, ব্যবহার এবং দাম জানুন!
রিভার্ট ২০ খাওয়ার নিয়ম
রিভার্ট ২০ খাওয়ার নিয়ম রোগীর অবস্থা এবং ডাক্তারের পরামর্শের উপর নির্ভরশীল। সাধারণত, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দিনে তিনবার একটি করে ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে, আপনার নির্দিষ্ট সমস্যার জন্য সঠিক ডোজ এবং রিভার্ট ২০ খাওয়ার নিয়ম জানার জন্য অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
কিছু সাধারণ নির্দেশনা:
- রিভার্ট ২০ খাবারের সাথে গ্রহণ করা উচিত, যাতে পেটে অস্বস্তি না হয়।
- ট্যাবলেটটি গোটাবিশে জল দিয়ে গিলে ফেলুন, চিবিয়ে বা ভেঙে খাবেন না।
- প্রতিদিন একই সময়ে ঔষধ খাওয়ার চেষ্টা করুন।
- ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধের ডোজ পরিবর্তন করবেন না।
সঠিকভাবে রিভার্ট ২০ খাওয়ার নিয়ম মেনে চললে এর কার্যকারিতা বজায় থাকে।
রিভার্ট ২০ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
অন্যান্য ঔষধের মতো রিভার্ট ২০ এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, যদিও সেগুলো সাধারণত হালকা হয়। কিছু সাধারণ রিভার্ট ২০ এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো:
- তন্দ্রাচ্ছন্নতা (Drowsiness)
- মাথাব্যথা (Headache)
- পেটে ব্যথা (Stomach pain)
- মুখ শুকিয়ে যাওয়া (Dryness in mouth)
কিছু ক্ষেত্রে, বিরল হলেও, অতিরিক্ত ঘুম ঘুম ভাব বা পেটের অন্যান্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। যদি আপনি রিভার্ট ২০ খাওয়ার পর কোনো অস্বাভাবিক বা গুরুতর লক্ষণ অনুভব করেন, তবে দ্রুত আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। রিভার্ট ২০ এর সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরি।
রিভার্ট ২০ এর বিকল্প ব্র্যান্ড
বাজারে রিভার্ট ২০ এর কিছু বিকল্প ব্র্যান্ড পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো:
- Cinaron Plus (Square Pharmaceuticals PLC.)
- Cinarzin Plus (The Ibn Sina Pharmaceutical Ind. Ltd.)
- Cinazin Plus (The ACME Laboratories Ltd.)
- Cinaryl Plus (Opsonin Pharma Limited)
- Artigo (ACI Limited)
এই ঔষধগুলোতেও সিনারিজিন এবং ডাইমেনহাইড্রিনেট একই অনুপাতে থাকে এবং এদের কার্যকারিতা রিভার্ট ২০ এর মতোই। তবে, এদের প্রস্তুতকারক কোম্পানি এবং দাম ভিন্ন হতে পারে। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী এবং ডাক্তারের পরামর্শক্রমে আপনি এই বিকল্পগুলো বিবেচনা করতে পারেন। রিভার্ট ২০ এর বিকল্প জানা থাকলে প্রয়োজনে অন্য ব্র্যান্ডের ঔষধ ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপসংহার
এই ব্লগ পোস্টে আমরা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করলাম রিভার্ট ২০ এর কাজ কি এবং এটি কি কি সমস্যার উপশমে ব্যবহৃত হয়। আমরা জানলাম এটি সিনারিজিন এবং ডাইমেনহাইড্রিনেটের সমন্বয়ে তৈরি, যা মাথা ঘোরা এবং এর সাথে যুক্ত অন্যান্য উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। তবে, যেকোনো ঔষধ ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই একজন রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আপনার স্বাস্থ্য বিষয়ক যেকোনো জিজ্ঞাসায় ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
দ্রষ্টব্য
এই ব্লগ পোস্টটি শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনোভাবেই এটি চিকিৎসকের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হবে না। ঔষধ সেবনের পূর্বে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মহিলাদের রিভার্ট ২০ ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
FAQS
রিভার্ট ২০ এর কাজ হলো মাথা ঘোরা (ভার্টিগো) এবং এর সাথে যুক্ত বমি বমি ভাব বা অন্যান্য উপসর্গগুলো উপশম করা।
এটি প্রধানত ভার্টিগো, মোশন সিকনেস এবং মেনিয়ার্স রোগের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়।
সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দিনে তিনবার একটি করে ট্যাবলেট খাবারের সাথে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী খান।
এর সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো তন্দ্রাচ্ছন্নতা, মাথাব্যথা এবং মুখ শুকিয়ে যাওয়া।
শিশুদের জন্য এর ডোজ ডাক্তারের দ্বারা নির্ধারিত হয়। নিজে থেকে দেবেন না।
গর্ভবতী মহিলাদের রিভার্ট ২০ ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
হ্যাঁ, রিভার্ট ২০ খাওয়ার পর তন্দ্রাচ্ছন্নতা বা ঘুম ঘুম ভাব হতে পারে।
এর প্রধান উপাদানগুলো হলো সিনারিজিন এবং ডাইমেনহাইড্রিনেট।
এটি মাথা ঘোরা এবং এর সাথে যুক্ত অস্বস্তি কমাতে বেশ কার্যকর।
Read more:
পিরিয়ডের লক্ষণ বনাম গর্ভাবস্থার লক্ষণ: পার্থক্য কীভাবে বুঝবেন?
পিরিয়ড মিস হওয়ার আগে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ কী কী