পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার লক্ষণ: কারণ, উপসর্গ ও কখন ডাক্তার দেখানো উচিত

সোশাল মিডিয়ায় শোয়ার করুন!

5/5 - (1 vote)

নারীর জীবনে মাসিক একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। তবে, এমন সময় আসতে পারে যখন আপনার পিরিয়ড বন্ধ হয়ে যায়। পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার লক্ষণ জানা থাকলে, আপনি এর কারণ বুঝতে এবং সময় মতো সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারবেন। এই আর্টিকেলে আমরা মাসিক বন্ধ হওয়ার লক্ষণ, এর বিভিন্ন কারণ এবং কখন আপনার ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত তা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

কিছু সাধারণ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার লক্ষণ

পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার প্রধান লক্ষণ হলো যথাসময়ে মাসিকের অনুপস্থিতি। তবে, এর পাশাপাশি আরও কিছু লক্ষণ দেখা যেতে পারে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার লক্ষণ উল্লেখ করা হলো:

  • মাসিক না হওয়া: এটি পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার লক্ষণ গুলোর মধ্যে সবচেয়ে স্পষ্ট। যদি আপনার নিয়মিত মাসিক চক্র থাকে এবং সেই সময়ে পিরিয়ড না হয়, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার লক্ষণ
  • স্তনের পরিবর্তন: স্তনে ব্যথা, ফোলাভাব বা সংবেদনশীলতা অনুভব করা মাসিক বন্ধ হওয়ার লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায়ে এই ধরনের মাসিক বন্ধ হওয়ার লক্ষণ প্রায়শই দেখা যায়।
  • ক্লান্তি অনুভব: অস্বাভাবিক ক্লান্তি বা দুর্বলতা অনুভব করাও পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার লক্ষণ এর একটি অংশ হতে পারে। যদিও ক্লান্তি অন্যান্য কারণেও হতে পারে, তবে পিরিয়ড মিস হওয়ার সাথে এটি অনুভূত হলে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
  • বমি বমি ভাব অথবা বমি: বিশেষত সকালের দিকে বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া গর্ভাবস্থার একটি পরিচিত লক্ষণ এবং এটি মাসিক বন্ধ হওয়ার লক্ষণ এর মধ্যে পড়ে।
  • ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ: গর্ভবতী হলে জরায়ু বড় হওয়ার কারণে মূত্রাশয়ের উপর চাপ সৃষ্টি হয়, যার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন হতে পারে। এটিও এক ধরনের লক্ষণ
  • মেজাজের পরিবর্তন: হরমোনের ওঠানামার কারণে হঠাৎ মেজাজের পরিবর্তন বা সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পাওয়া অন্যতম লক্ষণ হতে পারে।
  • মাথা ঘোরা: হালকা মাথা ঘোরা বা দুর্বল অনুভব করা মাসিক বন্ধ হওয়ার লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
  • খাবারের আকাঙ্ক্ষা বা বিতৃষ্ণা: কিছু নির্দিষ্ট খাবারের প্রতি হঠাৎ আগ্রহ সৃষ্টি হওয়া অথবা আগে পছন্দের খাবারেও অরুচি আসা এর লক্ষণ হতে পারে।
  • চুল পাতলা হয়ে যাওয়া ও ত্বকের পরিবর্তন: চুল পড়া বেড়ে যায় এবং ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, ত্বকে বলিরেখা ও রিঙ্কলস দেখা দেয়।
  • যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া: ইস্ট্রোজেন হরমোন কমে যাওয়ায় যৌন ইচ্ছা হ্রাস পায়, যোনিপথ শুষ্ক হয়ে যাওয়ায় সহবাসে ব্যথা হতে পারে।

এই লক্ষণগুলো ছাড়াও আরও কিছু ছোটখাটো শারীরিক পরিবর্তন দেখা যেতে পারে যা পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার লক্ষণ এর ইঙ্গিত দিতে পারে।

আরও পড়ুন:

পিরিয়ড না হলে কি খাওয়া উচিত? ১০টি পিরিয়ড নিয়মিত করার খাবার

পিরিয়ডের সময় শারীরিক সম্পর্ক করা যায় কিনা?

পিরিয়ডের সময় সেক্স করলে কি হয়? আসল সত্যতা জানুন!

পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার কারণসমূহ (কেন আপনার পিরিয়ড বন্ধ হতে পারে?)

পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার একমাত্র কারণ গর্ভাবস্থা নয়। একজন নারীর মাসিক বন্ধ হওয়ার পেছনে আরও অনেক কারণ থাকতে পারে। নিচে কিছু সাধারণ কারণ উল্লেখ করা হলো:

  • গর্ভাবস্থা: এটি পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার সবচেয়ে প্রচলিত কারণ। গর্ভধারণের পর সাধারণত মাসিক চক্র স্থগিত হয়ে যায়।
  • মানসিক চাপ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্যকে ব্যাহত করতে পারে, যার ফলে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে বা সম্পূর্ণভাবে বন্ধও হয়ে যেতে পারে।
  • ওজনের পরিবর্তন: দ্রুত এবং উল্লেখযোগ্য ওজন হ্রাস বা বৃদ্ধি পিরিয়ডের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
  • হরমোনের ভারসাম্যহীনতা: পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS) বা থাইরয়েড সমস্যার মতো হরমোনজনিত ব্যাধি পিরিয়ড অনিয়মিত বা বন্ধ করে দিতে পারে।
  • কিছু ঔষধ: নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ, যেমন গর্ভনিরোধক পিল, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট বা কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে পিরিয়ড বন্ধ হতে পারে।
  • রজঃনিবৃত্তি (মেনোপজ): সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সের মধ্যে নারীদের মেনোপজ হয়, যখন তাদের মাসিক চক্র স্থায়ীভাবে সমাপ্ত হয়।
  • অতিরিক্ত শারীরিক কার্যকলাপ: যারা নিয়মিত কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করেন, তাদের ক্ষেত্রেও পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সুতরাং, কেবল পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার লক্ষণ দেখে এর মূল কারণ নির্ণয় করা সম্ভব নয়। সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।

আরও পড়ুন:

পিরিয়ডের সময় কি মিলন করা যায়?

পিরিয়ডের সময় টক খেলে কি হয়? জানুন উপকারিতা ও ঝুঁকি!

পিরিয়ড ১০ দিনের বেশি হলে করণীয়

কখন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত?

যদি আপনার নিয়মিত মাসিক চক্র থাকে এবং আপনি এক বা একাধিকবার পিরিয়ড মিস করেন, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। বিশেষ করে যদি আপনি পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার লক্ষণ এর পাশাপাশি অন্য কোনো অস্বাভাবিক উপসর্গ অনুভব করেন।

  • আপনি যদি নিশ্চিত না হন যে আপনার পিরিয়ড মিস হয়েছে কিনা।
  • যদি পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার লক্ষণ এর সাথে তীব্র পেটে ব্যথা বা অস্বাভাবিক রক্তপাত হয়।
  • যদি আপনি মনে করেন আপনি গর্ভবতী হতে পারেন।
  • যদি আপনার পিরিয়ড দীর্ঘ সময় ধরে অনিয়মিত থাকে।

আপনার ডাক্তার শারীরিক পরীক্ষা করবেন এবং প্রয়োজনে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন, যার মাধ্যমে পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার লক্ষণ এর সঠিক কারণ নির্ধারণ করা যাবে।

উপসংহার

পরিশেষে, আমরা বুঝতে পারলাম যে পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার লক্ষণ বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পারে। মাসিক অনুপস্থিতি প্রধান লক্ষণ হলেও, স্তনের পরিবর্তন, ক্লান্তি, বমি বমি ভাব এবং মেজাজের পরিবর্তনও পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থা ছাড়াও মানসিক চাপ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা জীবনযাত্রার পরিবর্তনও মাসিক বন্ধ হওয়ার লক্ষণ এর কারণ হতে পারে। তাই, মাসিক বন্ধ হওয়ার লক্ষণ দেখা গেলে এর অন্তর্নিহিত কারণ খুঁজে বের করা এবং যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। নিজের শরীরের প্রতি মনোযোগ দিন এবং কোনো অস্বাভাবিকতা নজরে এলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

কল টু অ্যাকশন

যদি আপনি এই আর্টিকেলে উল্লেখিত পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার লক্ষণ গুলোর কোনোটি অনুভব করেন, অথবা আপনার মাসিক নিয়মিত না হয়, তাহলে অনুগ্রহ করে একজন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সাথে যোগাযোগ করুন। সঠিক সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ এবং প্রয়োজনীয় পরীক্ষা আপনার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যেকোনো উদ্বেগের সমাধানে সহায়ক হবে। আপনার স্বাস্থ্যই সর্বাগ্রে। আজই আপনার ডাক্তারের সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করুন!

FAQS

আমার পিরিয়ড কেন বন্ধ হয়ে গেছে?

পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার অনেক কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে গর্ভাবস্থা, মানসিক চাপ, ওজন পরিবর্তন, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, কিছু ওষুধ বা মেনোপজ অন্যতম। সঠিক কারণ জানতে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার লক্ষণগুলো কী কী?

প্রধান লক্ষণ হলো মাসিক না হওয়া। এর পাশাপাশি স্তনে পরিবর্তন, ক্লান্তি, বমি বমি ভাব, ঘন ঘন প্রস্রাব, মেজাজের পরিবর্তন, মাথা ঘোরা এবং খাবারের আকাঙ্ক্ষা বা বিতৃষ্ণা দেখা যেতে পারে।

পিরিয়ড বন্ধ হলে কি আমি গর্ভবতী?

পিরিয়ড বন্ধ হওয়ার একটি সাধারণ কারণ গর্ভাবস্থা। তবে, নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রেগনেন্সি টেস্ট করা উচিত এবং ডাক্তারের সাথে কথা বলা উচিত।

কতদিন পিরিয়ড বন্ধ থাকলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?

যদি আপনার নিয়মিত মাসিক চক্র থাকে এবং একবারের বেশি পিরিয়ড মিস হয়, অথবা যদি আপনি অস্বাভাবিক কোনো লক্ষণ অনুভব করেন, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

স্ট্রেসের কারণে কি পিরিয়ড বন্ধ হতে পারে?

, অতিরিক্ত মানসিক চাপ আপনার হরমোনের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে, যার ফলে পিরিয়ড অনিয়মিত হতে পারে বা বন্ধও হয়ে যেতে পারে।

কোন ওষুধগুলো পিরিয়ড বন্ধ করতে পারে?

কিছু ওষুধ, যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট, কেমোথেরাপির ওষুধ এবং কিছু হরমোন থেরাপি পিরিয়ড বন্ধ করতে পারে।

পিরিয়ড বন্ধ হলে কখন প্রেগনেন্সি টেস্ট করা উচিত?

যদি আপনার পিরিয়ড মিস হওয়ার অন্তত এক সপ্তাহ পর প্রেগনেন্সি টেস্ট করা উচিত, যাতে সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়।


আরও পড়ুন:

হাই প্রেসার এর লক্ষণ ও প্রতিকার: রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে জানা উচিত!

উচ্চ রক্তচাপের লক্ষণগুলো কী কী? জানুন বিস্তারিত!

হাই প্রেসার ও লো প্রেসার এর লক্ষণ: জানুন এবং সুরক্ষিত থাকুন


সোশাল মিডিয়ায় শোয়ার করুন!

Leave a Comment