অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ? কারণ ও প্রতিকার

সোশাল মিডিয়ায় শোয়ার করুন!

5/5 - (1 vote)

অতিরিক্ত ঘাম বা হাইপারহাইড্রোসিস শুধু বিরক্তিকর নয়, আমাদের অজানা স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণও হতে পারে। অনেকেই ভাবেন, অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। এখানে আমরা অতিরিক্ত ঘামের কারণ, সম্ভাব্য রোগ, প্রতিকার এবং কিছু সাধারণ প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আলোচনা করব।

অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণ কি?

মানসিক চাপ ও উদ্বেগের কারণে একজন ব্যক্তির মুখে ঘাম দেখা যাচ্ছে, যা হাইপারহাইড্রোসিস বা অতিরিক্ত ঘামের লক্ষণ হতে পারে। অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ তা বোঝাতে এই ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে।

অতিরিক্ত ঘাম বা হাইপারহাইড্রোসিস বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারণগুলি হলো:

১. হাইপারহাইড্রোসিস

এটি এমন একটি সমস্যা যেখানে শরীরের ঘামের গ্রন্থিগুলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সক্রিয় কাজ করে। এই সমস্যা বংশগত কারনে হতে পারে, আবার অন্য কোনো শারীরিক বা স্বাস্থ্য সমস্যার কারণেও হতে পারে।

২. মানসিক চাপ ও উদ্বেগ

মানসিক চাপ, ভয় বা উদ্বেগের সময় শরীরে অ্যাড্রেনালিন (এক ধরনের হর*মোন) বেড়ে যায়, যা অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারন।

৩. হরমোনের পরিবর্তন

মেনোপজ, থাইরয়েড সমস্যা বা ডায়াবেটিসের কারণে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ঘাম বাড়াতে পারে।

৪. সংক্রমণ ও জ্বর

শরীরে সংক্রমণ বা জ্বর থাকলে ঘামের মাধ্যমে শরীর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

৫. অতিরিক্ত ওজন

অতিরিক্ত ওজনের কারণে শরীরে তাপ উৎপন্ন হয় বেশি, যার ফলে ঘাম বেড়ে যায়

৬. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

অ্যান্টিডিপ্রেসেন্টস বা ব্লাড প্রেশারের ওষুধের কারণে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।

৭. গরম আবহাওয়া ও খাবার

গরম আবহাওয়া, মশলাদার খাবার বা ক্যাফিন গ্রহণের পর ঘাম বাড়তে পারে।

অতিরিক্ত ঘামার লক্ষণ কি?

অতিরিক্ত ঘামার লক্ষণগুলি শারীরিক এবং মানসিক উভয় দিকেই প্রকাশ পেতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

১. শরীরের নির্দিষ্ট অংশে ঘাম

হাতের তালু, পায়ের তলা, বগল বা মুখে অতিরিক্ত ঘাম হওয়া।
ঘাম এমন পর্যায়ে হতে পারে যে হাত থেকে পানি ঝরার মতো অনুভূতি হয়

২. অবিরাম আর্দ্রতা

শরীরের কোনো অংশ সব সময় ভেজা বা স্যাঁতসেঁতে থাকা, এমনকি ঠান্ডা বা শান্ত পরিবেশেও।

৩. ঘামের কারণে ত্বকের সমস্যা

দুজন কাপল অতিরিক্ত ঘামের দুর্গন্ধে বিব্রত বোধ করছেন, যা হাইপারহাইড্রোসিস বা অতিরিক্ত ঘামের লক্ষণ হতে পারে।
অতিরিক্ত ঘামের দুর্গন্ধে বিব্রত কাপল

ঘাম জমে থাকার কারণে ত্বকে ফুসকুড়ি, চুলকানি বা ছত্রাকের সংক্রমণ হতে পারে।
ঘামের গন্ধের কারণে শরীরে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হতে পারে।

৪. দৈনন্দিন কাজে অসুবিধা

ঘামে ভেজা হাতের নখ, যা হাইপারহাইড্রোসিস বা অতিরিক্ত ঘামের লক্ষণ হতে পারে। অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ তা বোঝাতে এই ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে।

ঘামে ভেজা হাতের কারণে লেখা, টাইপিং বা বস্তু ধরা কঠিন হয়ে পড়ে।
ঘর্মাক্ত পায়ের কারণে জুতা পিছলে যাওয়া বা পা ফসকে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ও দুর্গন্ধ হয়।

৫. রাতে ঘাম

রাতের বেলা অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বিশেষ করে বালিশ বা চাদর ভিজে যাওয়া।

৬. মানসিক প্রভাব

অতিরিক্ত ঘামের কারণে বিব্রতবোধ, উদ্বেগ বাড়ে ও আত্মবিশ্বাস কমে যায়।
অনেকে সামাজিক অনুষ্ঠান, লোকালয় বা শারীরিক কার্যকলাপ এড়িয়ে চলেন।

অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ?

অতিরিক্ত ঘাম শুধু বিরক্তকর কারণ নয়, এটি নিম্নলিখিত রোগ বা স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে:

১. হাইপারহাইড্রোসিস

হাইপারহাইড্রোসিস হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে ঘামের গ্রন্থিগুলো অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে যায়। এটি প্রাথমিক বা সেকেন্ডারি হতে পারে। প্রাথমিক হাইপারহাইড্রোসিসের কোনো স্পষ্ট কারণ নেই, তবে সেকেন্ডারি হাইপারহাইড্রোসিস অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে হতে পারে।

২. ডায়াবেটিস

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে, বিশেষ করে রাতে।

৩. থাইরয়েড সমস্যা

হাইপারথাইরয়েডিজম বা থাইরয়েড গ্রন্থির অতিরিক্ত সক্রিয়তা শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।

৪. হৃদরোগ

হৃদরোগ বা হার্টের সমস্যা থাকলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, যার ফলে ঘাম বেড়ে যেতে পারে।

৫. মানসিক চাপ বা উদ্বেগ

মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা প্যানিক অ্যাটাকের সময় শরীরে অ্যাড্রেনালিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ঘাম বৃদ্ধি করে।

৬. সংক্রমণ

টিবি, এইডস বা অন্যান্য সংক্রমণের কারণে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।

৭. মেনোপজ

মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে মহিলাদের মধ্যে অতিরিক্ত ঘাম এবং গরম লাগার অনুভূতি দেখা দেয়।

অতিরিক্ত ঘামের প্রতিকার

অতিরিক্ত ঘাম বা হাইপারহাইড্রোসিসের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে নিম্নলিখিত উপায়গুলি অনুসরণ করল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

১. শক্তিশালী অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট ব্যবহার

সাধারণ ডিওডোরেন্টের পরিবর্তে শক্তিশালী অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট (একটি প্রসাধণী) ব্যবহার করুন, যা ঘামের গ্রন্থিগুলোকে ব্লক করে ঘাম কমাতে সাহায্য করে।

  • অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড সমৃদ্ধ অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট ব্যবহার করুন, যা ঘামের প্রবাহ কমাতে কার্যকর।
  • রাতে শোয়ার আগে অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট প্রয়োগ করুন, যখন ঘামের গ্রন্থিগুলো কম সক্রিয় থাকে।
  • যদি সাধারণ অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট কাজ না করে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে প্রেসক্রিপশন-শক্তির অ্যান্টিপারস্পিরেন্ট ব্যবহার করুন।

২. জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনুন

জীবনযাত্রার কিছু সহজ পরিবর্তন অতিরিক্ত ঘামের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে:

  • খাদ্যাভ্যাস: মশলাদার খাবার, ক্যাফিন এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন। এই খাবারগুলি শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে ঘামের পরিমাণ বাড়াতে পারে।
  • পোশাক: সুতি বা শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার মতো হালকা কাপড় পরুন। টাইট বা সিনথেটিক কাপড় এড়িয়ে চলুন, যা ঘাম জমিয়ে রাখে।
  • ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা: নিয়মিত গোসল করুন এবং শরীর পরিষ্কার রাখুন। এছাড়াও, শরীরের ঘাম জমে থাকা অংশে ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করুন।
  • স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট: মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ ঘাম বাড়াতে পারে। যোগব্যায়াম, মেডিটেশন বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম চেষ্টা করুন।

৩. চিকিত্সা পরামর্শ নিন

যদি ঘামের সমস্যা খুব বেশি হয় এবং দৈনন্দিন জীবনে বাধা সৃষ্টি করে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। নিম্নলিখিত চিকিত্সা পদ্ধতিগুলি সাহায্য করতে পারে:

  • বোটক্স ইনজেকশন: বোটুলিনাম টক্সিন ইনজেকশন ঘামের গ্রন্থিগুলোকে অস্থায়ীভাবে ব্লক করে ঘাম কমাতে সাহায্য করে। এটি বিশেষ করে বগল, হাত এবং পায়ের জন্য কার্যকর।
  • আইয়ন্টোফোরেসিস: এই পদ্ধতিতে হাত ও পায়ের তালুকে পানির মধ্যে রেখে মৃদু বৈদ্যুতিক প্রবাহ প্রয়োগ করা হয়। এটি ঘামের গ্রন্থিগুলোকে অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়।
  • ওষুধ: ডাক্তারের পরামর্শে অ্যান্টিকোলিনার্জিক ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ঘাম কমাতে সাহায্য করে।
  • সার্জারি: যদি অন্যান্য পদ্ধতিগুলি কাজ না করে, তাহলে ঘামের গ্রন্থি অপসারণ বা স্নায়ু অস্ত্রোপচারের মতো সার্জিকাল অপশন বিবেচনা করা যেতে পারে।

৪. ঘরোয়া প্রতিকার

কিছু ঘরোয়া প্রতিকার অতিরিক্ত ঘাম নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে:

  • বেকিং সোডা: বেকিং সোডা এবং পানির পেস্ট তৈরি করে ঘামের জায়গায় লাগান। এটি ঘাম শোষণ করে এবং দুর্গন্ধ কমাতে সাহায্য করে।
  • লেবুর রস: লেবুর রস প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিনজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটি ঘামের গ্রন্থিগুলোকে সংকুচিত করে ঘাম কমাতে সাহায্য করে।
  • গ্রিন টি: গ্রিন টি শরীরের বিষাক্ত পদার্থ দূর করে এবং ঘাম কমাতে সাহায্য করে।

উপসংহার

অতিরিক্ত ঘাম শুধু অস্বস্তির কারণ নয়, এটি বিভিন্ন রোগের লক্ষণও হতে পারে। যদি আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ এই সমস্যায় ভুগছেন, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সঠিক চিকিত্সা এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের মাধ্যমে এই সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

Call to action:

অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ, পোস্টটি আপনার উপকারে এসেছে? ‍নিয়মিত নতুন নতুন আপডেট পেতে পুশ নটিফিকেশন সাবস্ক্রাইব করুন, নিচে কমেন্ট করে জানান এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন!

আরও পড়ুন:

গা ঘামার সমস্যা? জেনে নিন কোন ভিটামিনের অভাবে গা ঘামে!

গোপনাঙ্গ ফর্সা করার উপায়: ৫টি প্রাকৃতিক ও নিরাপদ পদ্ধতি!

লজ্জাস্থানের কালো দাগ দূর করার ক্রিম ও প্রাকৃতিক উপায়!

3টি বগলের কালো দাগ দূর করার ক্রিমের নাম: উৎস ও ব্যবহার পদ্ধতি!

বগলের কালো দাগ দূর করার উপায়: ৫টি প্রাকৃতিক পদ্ধতি জানেন কি?

FAQS

শিশুর অতিরিক্ত ঘাম কোন রোগের লক্ষণ?

শিশুর অতিরিক্ত ঘাম বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার লক্ষণ হতে পারে যেমন:
ভিটামিন ডি এর অভাব: ভিটামিন ডি এর অভাবে শিশুর হাড় ও পেশী দুর্বল হয়ে যায়, যার ফলে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
হৃদরোগ: জন্মগত হৃদরোগ বা হার্টের সমস্যা থাকলে শিশুর শরীরে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, যার ফলে ঘাম বেড়ে যেতে পারে।
থাইরয়েড সমস্যা: হাইপারথাইরয়েডিজম বা থাইরয়েড গ্রন্থির অতিরিক্ত সক্রিয়তা শিশুর মধ্যে অতিরিক্ত ঘামের কারণ হতে পারে।
পরামর্শ: যদি শিশুর অতিরিক্ত ঘামের পাশাপাশি জ্বর, ওজন কমে যাওয়া বা শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কোন ভিটামিনের অভাবে গা ঘামে?

নিম্নলিখিত ভিটামিনের অভাবে গা ঘামতে পারে:
ভিটামিন ডি: ভিটামিন ডি এর অভাবে হাড় ও পেশী দুর্বল হয়ে যায়, যার ফলে শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
বি ভিটামিন (বি১, বি১২): বি ভিটামিনের অভাবে স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়, যা ঘাম বৃদ্ধির কারণ হতে পারে।
ভিটামিন সি: ভিটামিন সি এর অভাবে ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়ে যায়, যার ফলে শরীরে সংক্রমণ এবং অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
পরামর্শ: সুষম খাদ্য গ্রহণ এবং প্রয়োজন হলে ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট নিন। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করবেন না।

শীতল ঘাম হওয়া কোন রোগের লক্ষণ?

শীতল ঘাম সাধারণত শরীরের কোনো গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
হার্ট অ্যাটাক: হার্ট অ্যাটাকের সময় শীতল ঘাম, বুকে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
লো ব্লাড প্রেশার: রক্তচাপ কমে গেলে শরীরে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়, যার ফলে শীতল ঘাম হতে পারে।
সংক্রমণ: ব্যাকটেরিয়াল বা ভাইরাল ইনফেকশনের কারণে শরীরে শীতল ঘাম এবং জ্বর হতে পারে।
ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) শীতল ঘাম হতে পারে।
পরামর্শ: যদি শীতল ঘামের এই উপসর্গ সমূহ দেখা দিলেঅবিলম্বে ডাক্তারের কাছে যান।


সোশাল মিডিয়ায় শোয়ার করুন!

Leave a Comment